ঢাকা :২৯ মে, বুধবার ২০১৯ :
ঈদযাত্রায় অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য ও সড়ক দুর্ঘটনা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবী জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। একই সাথে যাত্রী হয়রানি ও টিকিট কালোবাজারী বন্ধে জরুরী পদক্ষেপ গ্রহণের দাবী জানান সংগঠনটি।
আজ ২৯ মে বুধবার সকালে নগরীর জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্চে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি আয়োজিত “ঈদযাত্রায় দূর্ভোগ ঃ আমাদের দায়িত্ব” শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনা সভায় উপরোক্ত দাবী জানানো হয়।
সভায় বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোঃ মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, যানজটের কারণে যাত্রীবাহী বাসগুলো কাঙ্খিত সংখ্যক ট্রিপ দিতে না পেরে তা পুষিয়ে নেওয়ার জন্য বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালাতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পতিত হয়ে প্রতিবছর ঈদযাত্রা মৃত্যুর মিছিলে পরিণত হয়। গত বছর ঈদুল ফিতরে দেশের সড়ক পথে ২৭৭ টি দুর্ঘটনায় ৩৩৯ জন নিহত ১২৬৫ জন আহত হয়েছিল। অধিকাংশের মৃত্যুর কারণ পণ্যবাহী যানবাহনের সঙ্গে যাত্রীবাহী বাসের সংঘর্ষ ও বেপরোয়া গতি। তাই এবারের ঈদযাত্রায় দুর্ঘটনা প্রতিরোধে ফিটনেসবিহীন যানবাহন ও লাইসেন্সবিহীন চালক বন্ধ করার পাশাপাশি জাতীয় ও আঞ্চলিক মহাসড়ক থেকে ত্রি-হুইলার, অটোরিক্সাসহ ধীরগতিরযান তুলে দেয়ার দাবী জানান তিনি ।
সভায় বলা হয়, ঈদযাত্রায় অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য ও টিকিট কালোবাজারী বন্ধ করা না গেলে ফিটনেসবিহীন যানবাহন ও পণ্যবাহী পরিবহনে নি¤œআয়ের লোকজনের যাতায়াত কোনভাবেই ঠেকানো যাবেনা। দেশব্যাপী সকল বাস, লঞ্চ ও অভ্যন্তরীন বিমান পরিবহণ কোম্পানীগুলোর ঈদযাত্রায় ভাড়া নৈরাজ্য প্রতিরোধে বিআরটিএ, ভোক্তা অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনের মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জরুরী ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দাবী জানানো হয়।
সভায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান বলেন, দেশে আইনের শাসন অনুপস্থিত বলেই পদে পদে মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে। জবাবদিহিতার জায়গায় আমরা একটা দুর্বল অবস্থানে আছি। এখানে জবাবদিহিতা একদম নেই। কারণ আইনের শাসন একদম প্রতিষ্ঠা করতে পারিনি। সড়কের নৈরাজ্য বন্ধ করতে হলে চাঁদাবাজি, ধান্ধাবাজি ও কায়েমি স্বার্থের উর্ধ্বে উঠে আইনের শাসন সুনিশ্চিত করতে হবে।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, দেশে সড়কের পরিস্থিতি আগের তুলনায় অনেক ভাল। এবার সড়কের কারণে ভোগান্তি হবে না। তবে গণপরিবহন সংকটসহ নানা কারণে ফিটনেসবিহীন যানবাহন বন্ধ করা সম্ভব হয় না। তিনি আরো বলেন, ঢাকা শহরে ঘন্টার পর ঘন্টা যানজটে আটকে থাকতে হয়। ২০২৪ সালের মধ্যে ঢাকা মহানগরীর ৫টি এমআরটি লাইন সম্পন্ন হলে আর যানজটের ভোগান্তি থাকবে না। তিনি ব্যক্তিগত পরিবহন নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি গণপরিবহন ব্যবস্থা উন্নততর সরকারের গৃহিত কর্মকান্ড তুলে ধরেন।
ডিটিসিএ’র সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ ড. এস.এম সালেহ উদ্দিন বলেন, পরিকল্পিতভাবে যানবাহন নিবন্ধন করা না গেলে দেশের সড়ক মহাসড়কের উন্নয়ন কর্মকান্ডের সুফল ধরে রাখা যাবে না। তিনি ঈদ ব্যবস্থাপনায় একটি সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণের উপর জোর দেন।
বিআরটিএ’র সাবেক চেয়ারম্যান আইয়ুবুর রহমান বলেন, ফিটনেসবিহীন যানবাহন বন্ধ করা না গেলে ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনা কোন ভাবেই কমানো যাবে না। তিনি এক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান।
বিআরটিএ’র রোড সেইফটি পরিচালক শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রব্বানী বলেন, প্রতি ঈদে অল্প সময়ে এত বেশি সংখ্যক লোকজনের যাতায়াত সামাল দেওয়া সত্যিই দূরহ। তারপরও মাননীয় সড়ক ও সেতুমন্ত্রীর দূরদর্শী পদক্ষেপের কারণে ঈদযাত্রায় দুর্ভোগ ধীরে ধীরে কমে আসছে।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্ময়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ঈদের আগে ঈদের সমস্যাকে সমস্যা হিসেবে না দেখে বছর ব্যাপী এসব সমস্যা সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ থাকা জরুরী। তিনি পরিবহনে চাঁদাবাজী জিইয়ে রাখা, শ্রমিকদের নিয়োগপত্র, কর্মঘন্টা ও মজুরী না থাকায় পরিবহন সেক্টরের নৈরাজ্য বন্ধ করা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন।
সভায় আরো বক্তব্য রাখেন ঢাকা যানবাহন সমন্ময় কর্তৃপক্ষ’র সিনিয়র আর্বান প্লানার তপন কুমার নাথ, যাত্রী কল্যাণ সমিতির কেন্দ্রীয় নেতা নুর উদ্দিন খান, মহিউদ্দিন আহমেদ, চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক সৈয়দ মোহাম্মদ মোক্তার উদ্দিন, ভাড়াটিয়া পরিষদের আহ্বায়ক বাহারানে সুলতান বাহার প্রমুখ।
পাঠকের মতামত: